বৃক্ষ রোপনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

বৃক্ষ রোপনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের আর্টিকেল। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় যে উপাদান অক্সিজেন সেটি সরবরাহ করে এই বৃক্ষ তাই বৃক্ষরোপনের গুরুত্ব অনেক। আর এই কথা চিন্তা করে আজ আমরা বৃক্ষ রোপণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো। 

বৃক্ষ রোপণের গুরুত্বর্পূন কিছু টিপস

আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বৃক্ষের ভুমিকা রয়েছে। তাই প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত প্রতিবছর একটি বা দুটি  করে বৃক্ষ রোপন করা। সঠিক নিয়মে বৃক্ষরোপণ কিভাবে করতে হয় তা জানবো আজকের আমাদের আলোচনায়। 

সূচিপত্র: বৃক্ষরোপনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস 

বৃক্ষ রোপনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস 

বৃক্ষরোপনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমে যে প্রশ্নটি মাথায় আসে সেটি হচ্ছে বৃক্ষরোপণ আমরা কেন করব?এর উত্তর হচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হচ্ছে অক্সিজেন। আর এই অক্সিজেন সরবরাহ হয় বৃক্ষ থেকেই। আমরা যে শ্বাস নেই সেটি হচ্ছে মূলত অক্সিজেন। আর আমরা যে নিঃশ্বাস ত্যাগ করি সেটি হচ্ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড। বৃক্ষ আমাদের এই ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে। 

তাই আমাদের বেঁচে থাকার জন্য বৃক্ষ রোপনের গুরুত্ব অনেক। আর এই বৃক্ষ রোপন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস রয়েছে।যে টিপস গুলো ফলো করলে বৃক্ষ তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে, রোগ বালায় কম হয় এবং চার বৃক্ষ মোরে কম। আমরা আপনাদের জানাবো আজকের সেই বৃক্ষ রোপনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস গুলো। আপনি যদি বৃক্ষরোপণ করতে চান তবে আমাদের আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে পড়ুন এবং টিপস গুলো মেনে বৃক্ষ রোপন করুন। 

  1. যে জায়গায় চারা রোপন করব সেই জায়গা আগে নির্বাচন করা। 
  2. জায়গা অনুযায়ী চারা নির্বাচন করা অথবা চারা অনুযায়ী জায়গা নির্বাচন করতে হবে। 
  3. একেক বৃক্ষের চারার জন্য একেক রকম  মাপ জোখের প্রয়োজন হয়। 
  4. নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী বৃক্ষরোপন করতে হবে যাতে একটি গাছের সাথে অন্য গাছের ডালপালা জরিয়ে না যায়। 
  5. যে জায়গায় চারা রোপন করব সেই জায়গায় আগে গর্ত করে জৈব সার দিয়ে  রাখতে হবে। 
  6. বৃক্ষরোপনের জন্য সতেজ ও রোগমুক্তো চারা নির্বাচন করতে হবে। 
  7. জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত হচ্ছে চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। 
  8. যে জায়গায় বৃক্ষরোপন করব সেই জায়গায় ঘিরে রাখতে হবে যাতে ছাগলে চারা নষ্ট করতে না পারে।
  9. বৃক্ষের চারা রোপনের পর সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে। 
  10. বৃক্ষের চারা রোপনের পর বৃক্ষের জাত অনুযায়ী সঠিকভাবে সার ও কীটনাশক দিতে হবে।
  11. বৃক্ষের চারার অংশ বা পাতায় রোগে আক্রান্ত হলে সে অংশ বা পাতা কেটে ফেলতে হবে। 

বৃক্ষ রোপনের জন্য নিদিষ্ট জায়গা নির্বাচন করা 

বৃক্ষ রোপনের যে গুরুত্বপূর্ণ টিপসগুলো রয়েছে। তার প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিক জায়গা নির্বাচন করা। অনেকেই বড় জায়গায় পছন্দমত গাছ লাগাইয়া আবার অনেকে ছোট জায়গায় তাহলে সাধ্যমত গাছ লাগাই। জায়গা ছোট হোক বা বড় হোক জায়গার মাটির গুনাগুন দেখে রোপন করা উচিত এতে বৃক্ষরোপণের সুফল পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি। আমাদের প্রত্যেকের উচিত বাড়ির উঠানে একটা করে বনজ, ফলোজ, ওষধি, ইত্যাদি গাছ লাগানো। এতে করে আমাদের সব রকম চাহিদা মেটে। কারণ একটি ফলের গাছ যেমন আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু ইত্যাদি  আপনাকে ফলের চাহিদা মেটাবে। 

একেক ধরনের গাছের জন্য একেক রকম মাটির প্রয়োজন হয় বা একেক রকম মাটিতে এক এক রকম বৃক্ষ ভালো জন্মে। তাই আমাদের জায়গার ধারণা মাটির গুনাগুন দেখে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। যেমন আম গাছ যেসব মাটিতে ভালো জন্মে লিচু গাছ সেসব মাটিতে ভালো  নাও হতে পারে। আবার যেসব ভালো জন্মে আম গাছ ভালো নাও জন্মেতে পারে। আবার একেক জায়গার মাটির  গুনাগুন  অনুযায়ী ফলের স্বাদ কম বেশি হয়। যেমন মধুপুরের আনারস মিষ্টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম সুস্বাদু, দিনাজপুরের লিচু মিষ্টি ইত্যাদি। 

তাই আপনার জায়গায় কোন ধরনের ফসল ভালো হবে বা কোন বৃক্ষ লাগালে সেটি ভালো হবে সে অনুযায়ী আপনাকে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। এটি হচ্ছে বৃক্ষ রোপনের প্রথম ধাপ। 

বৃক্ষরোপণের সঠিক মাপ জোখ

বৃক্ষরোপনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস এর মধ্যে বৃক্ষ রোপনের সঠিক মাপ জোখ একটি। সঠিক মাপ জোখ ছাড়া বৃক্ষ রোপন করলে তেমন সুফল পাওয়া যায় না। চারার বয়স ও চারার প্রজাতি অনুযায়ী মাপজোখ করে বৃক্ষরোপন করতে হয়। যেমন এক বছর বয়সী চারার জন্য গর্তের পরিমাণ হবে ১×১×১। এবং দুই বছর বয়সের চারার জন্য ১.৫×১.৫× ১.৫ গর্ত করে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। এবং দুটি চারার মাঝে নির্দিষ্ট গ্যাপ রাখতে হবে। 
বৃক্ষরোপণ করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি পদ্ধতি হচ্ছে বর্গাকার পদ্ধতি আয়তাকার পদ্ধতি ত্রিভুজ আঁকার পদ্ধতি জ্যামিতিক পদ্ধতি, পিরাম অডিও পদ্ধতি ইত্যাদি। বৃক্ষরোপন করার পদ্ধতি অনুযায়ী মাপ জোখ নিতে হয়। 

বৃক্ষরোপনের উপযুক্ত সময় 

বৃক্ষরোপণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস এর মধ্যে বৃক্ষরোপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে অন্যতম। কারণ একটি নির্দিষ্ট সময় বৃক্ষরোপন করতে হয়। সারা বছর বৃক্ষরোপণ করা গেলেও বৃক্ষরোপনের উপযুক্ত সময়ে বৃক্ষরোপন করলে অনেক সুবিধা হয় যেমন বৃক্ষ পরিচর্যা করতে কম হয়। নিয়মিত পানি দিতে হয় না। চারা দ্রুত বেড়ে ওঠে। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৃক্ষ অতোপ্রতো ভাবে জড়িত রয়েছে। বৃক্ষ ছাড়া আমাদের জীবন অচল। যেমন বৃক্ষ আমাদের অক্সিজেন দেয়, খাবারের যোগান দেয়, আমাদের আসবাবপত্রের যোগান দেয়, তাই আমাদেরর আমাদের সকলের উচিত বৃক্ষরোপণ করা। 
বৃক্ষ রোপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এবং বাংলায় আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ বর্ষাকাল হচ্ছে বৃক্ষ রোপণের উপযুক্ত সময়। এই সময় প্রতিদিন চারা গাছে পানি দিতে হয় না। তাছাড়া এই সময় গাছের পরিচর্যা কম করতে হয় এবং গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া বর্ষাকালে বৃক্ষরোপেন অনেক সুবিধা রয়েছে সেগুলো হলো 
  • বর্ষাকালে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে যা চারা বেড়ে ওঠার জন্য উপকারী।
  • বর্ষাকালে চারা গাছে তেমন পানি দিতে হয় না। 
  • বর্ষাকালের আদ্র আবহাওয়া গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 
  • তাছাড়া বর্ষাকালে প্রতিদিন পানি হয় বলে মাটি ঝুরঝুরে থাকে ফলে গাছের শিকড় মিলতে সাহায্য করে। 
তাছাড়া সঠিক ভাবে পরিচযা করলে কমবেশি সারা বছর বৃক্ষরোপণ করা যায়। 

বৃক্ষ রোপণের গুরুত্বর্পূন কিছু টিপস

বৃক্ষ রোপনের সঠিক পরিচর্যা কিভাবে নিতে হয় 

সঠিকভাবে বৃক্ষরোপণ করেও সুফল পাওয়া যাবে না যদি বৃক্ষরোপনের পর সঠিকভাবে পরিচর্যা করা না হয়।আমাদের মনে রাখতে হবে শুধু বৃক্ষরোপণ করলেই হবে না বৃক্ষ কে টিকিয়ে রাখা সবচেয়ে বড় কাজ। বৃক্ষরোপনের পর সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে কাজগুলো তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে  এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। বৃক্ষ রোপনের পর কিভাবে গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে তা নিচে বর্ণনা করা হলো : 
গাছের গোড়া পরিষ্কার করতে হবে: বৃক্ষরোপনের পরপর গাছের গড়া পরিষ্কার করতে হবে যাতে করে গাছের গোড়ায় কোন আগাছা বেড়ে উঠতে না পারে। এবং গাছ পুরোপুরি পুষ্টি পায়।
গাছের গোড়ায় নিয়মিত সেচ দিতে হবে : গাছ লাগার পর গাছের গোড়ায় নির্মিত পানি দিতে হবে। মাটির রস পুরোপুরি শোকার আগেই গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে। 
সার দিতে হবে: গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য এবং পুষ্টির  ঘাটতি মেটানোর জন্য গাছের গোড়ায় নিয়মিত সার দিতে হবে। 
রোগ দমন করা ও পোকা মাকরে হাত থেকে রক্ষা করা : চার রোপনের পরপর বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব ও বিভিন্ন রোগ  দেখা দিতে পারে।তার জন্য আমাদের নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে এবং রোগাক্রান্ত ডালপালা কেটে ফেলতে হবে। 
জীবজন্তুর হাত থেকে রক্ষা করা: জীবজন্তুর হাত থেকে চারা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে বেড়া দিতে হবে।
দূরত্ব বজায় রেখে চারা রোপন করা: যেখানে পর্যন্ত আলো বাতাস চলাচল করতে পারে। তেমন স্থানে চারারোপণ করতে হবে। এবং দুটি চারার মাঝে পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে। যাতে করে একটি ডালপালা অন্যটির সাথে লেপটে না  যায়। 
চারা গোড়ায় খুটি দিতে হবে : চারা যাতে হেলেনা পড়ে তার জন্য চারার গোড়য় বাশ বা অন্যান্য কিছুর খুটি দিতে হবে।

বৃক্ষরোপনের কিছু সতর্কীকরণ দিক 

বৃক্ষ রোপণের উপযুক্ত সময়ে বৃক্ষ রোপণ করলেও। কিছু কিছু কিছু বিষয় খেয়াল রেখে বৃক্ষরোপন করতে হবে। বৃক্ষ আমাদের জীবন বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। কারণ অক্সিজেন ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত বাঁচতে পারব না। আর এয় প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে বৃক্ষ
।তাই আদিকাল থেকেই মানুষ তাদের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত বৃক্ষরোপন করে আসছে। আমরা যে বৃক্ষরোপন করি তা অনেক সময় অকালে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বৃক্ষরোপনের সঠিক নিয়ম মেনে বৃক্ষরোপন করলে এমনটি হবে না।

তাছাড়া বৃক্ষ রোপনের সঠিক নিয়ম মেনে বৃক্ষরোপণ করলেও কিছু বিষয় লক্ষ্য করে বৃক্ষরোপন করতে হয় টি নিয়ে। এখন আমরা জানবো সেগুলো কি কি । 
  • বর্ষাকালে বৃক্ষ রোপনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে। 
  • আর শুকনো মৌসুমে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দিতে হবে 
  • বৃক্ষ রোপণের জন্য সবসময় সতেজ ও রোগ মুক্তো পুষ্ট চারা রোপণ করতে হবে। 
  • চারা রোপনের জন্য সব সময় এক বছরের কম বয়সী যারা রোপন করতে হবে 
  • গাছে কোন পোকামাকড় আক্রমণ করলে সাথে সাথে কীটনাশক। 

সর্বশেষ: বৃক্ষ রোপনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম বৃক্ষ রোপনের  গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস নিয়ে। বিক্ষো আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত রয়েছে। বৃক্ষ ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত বেঁচে থাকতে পারবো না। বৃক্ষের গুরুত্ব জানার পরেও আমরা প্রতিনিয়ত বৃক্ষ কেটে চলছি। যা আমাদের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। প্রতিটি দেশে তার জনসংখ্যার ২৫% বনভূমি থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে এর পরিমাণ প্রতিনিয়ত কমেয় চলেছে। এখনয় আমদের বনভূমি নিধনে সোচ্চার হতে হবে এবং বেশি বিশ বৃক্ষ রোপণ করতে হবে।
 
আমাদের দেশের অদুর ভবিষৎ এর কথা চিন্তা করে যদি বৃক্ষ রোপণে উসাহি হন তবে অবশ্যয়  আমাদের এই বৃক্ষ রোপণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস এই আটিকেল ধৈরয ধরে পড়ুন। এবং বন্ধু দের মাঝে শেয়ার করে তাদের কেও বৃক্ষ রোপণে উৎসাহিত করুন।  



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এএন আইটি কেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url